এলাকাবাসী জানান, পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি থেকে সাতক্ষীরা সদর হয়ে সরাসরি কলকাতা যাওয়ার সড়ক নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন প্রায় শত বছর আগে আধুনিক বিনোদগঞ্জ বাজারের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু। সে মতো টাকাও সংগ্রহ করেন তিনি। কিন্তু তৎকালীন কিছু প্রতিবন্ধকতায় সে সময় বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি সেতু নির্মাণ।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময় এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ফলে কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০০ সালে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সেতু নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। কিছুদিন চলার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সে সময়ের মধ্যে সেতুর আংশিক কাজ শেষ হয়। পরবর্তী সময়ে পলি জমে কপোতাক্ষ মৃত নদে পরিণত হয়। সে সঙ্গে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রাম ও স্বপ্নের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে নদ খননের জন্য ২০১১ সালের নবেম্বরে ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। খনন করা হয় কপোতাক্ষ। কিন্তু পিলারগুলোতে পলি জমে ভরাট হওয়ায় খনন কাজে আসছে না।
খুলনা এলজিইডির একটি সূত্র জানায়, কপিলমুনি-সাতক্ষীরার জেঠুয়া ব্রিজ নির্মাণ কাজে ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৪২ হাজার ৯১৯ টাকা ৫৫ পয়সা। কাজের মান প্রশ্নে পরবর্তী সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকায়। নির্মাণের দায়িত্ব পায় এন হক অ্যাসোসিয়েট নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল হকের। কার্যক্রম শুরু হয় ২০০০ সালের ১২ এপ্রিল। এরপর ২০০৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ শেষ করে আইএফআইসি ব্যাংক খুলনা শাখা থেকে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭২২ টাকা উত্তোলন করে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়।
পরবর্তী পর্যায়ে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। খুলনা মহানগর হাকিম আদালতে খুলনা এলজিইডি মামলা করে। যার ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে মামলাসহ নানা জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রীতার কারণে সেতু নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সেতুর বাকি কাজ সমাপ্ত করতে ইসলাম গ্রুপ নামের অপর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পায়। তারা নির্মাণকাজ শুরু করে ২০০৪ সালে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সাতক্ষীরা কপোতাক্ষ নদের স্রোত বাধা পাবে মর্মে একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করলে সেতু নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু নদের বক্ষে ১৮টি পিলার থেকে যায়। পিলারগুলোর একদিকে জোয়ার-ভাটায় পলি জমছে, ভরাট হচ্ছে। অন্যদিকে নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।
কপিলমুনি এলাকার কামরুল আহমেদ বলেন, এখনই যদি ওইসব পিলার অপসারণ না করা হয়, তবে ৩শ’ কোটি টাকা ভেস্তে যাবে আবারও পলি জমে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) খুলনা নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম কবির বলেন, ‘এটা নদের জন্য বেশ বড় সমস্যা। এ প্রকল্প কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগে। এখন নতুনভাবে এটির কাজ করতে হবে। তবে সব থেকে ভালো হত নদ খননের সময় এগুলো অপসারণ করলে। কিন্তু কেন যে করা হলো না তা বুঝতে পারলাম না।’